বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামুয়ালাইকুম , আশা করি , সবাই ভালো আছেন ।
আজকে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব , সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে আমি মনে করি ।
সেটি হল , আল্লাহ তায়ালা অনেক আয়াতে বলেছেন , কাফেরদের মোহর মারার বিষয় গুলো ।
এখন , নাস্তিকদের দাবী , “যেহেতু আল্লাহ এটা বলেই দিয়েছেন , যে কাফেরদের মোহর মারা শেষ , সেহেতু তারা হেদায়াত পাবে কিভাবে ?"
তার মানে তারা বলতে চায় , কাফেররা কাফের হওয়ার কারণ , আল্লাহ তায়ালা মোহর মেরে দিয়েছেন । নিরঅপরাধ লোকদের মোহর মেরে দিয়ে কাফের বানায় দিয়েছেন ।
এটা যদি তাদের দাবী হয়ে থাকে , কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত নাস্তিকদের চ্যালেন্জ করলাম । যেই এই দাবী করবে , আমাকে তাকে ফেস করতে হবে ।
যুক্তিসমূহ:-
তো আসুন , শুরু করা যাক দেখি আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন , আর নাস্তিকরা কি গজামিল দিতে চায় ।
প্রথমেই দেখি ,
সুরা আল বাকারা -৭
আল্লাহ তায়ালা এখানে বলেছেন , তাদের অন্তরে মোহরাংকিত করে দেয়া হয়েছে , এবং তাদের চক্ষুসমূহের উপর একটা আবরণ পরে আছে ।
Anwarul Quran ,
আসুন দেখি , তাফসিরে এই আয়াতের ব্যপারে কি বলা হয়েছে ,
পরিষ্কার ভাবে বলা আছে , যে এখানে , সেই সমস্ত কাফেরদের কথা বলা হয়েছে , যারা প্রকৃত অর্থে কাফের হয়ে মারা গিয়েছে । এবং তারা আসলেই চায়নি , ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিজেদের হেদায়াত থেকে , দূরে রেখেছিলো ।
প্রথমত , এই আয়াতে বলা হয়েছে , তাদের অন্তরে মোহর মারা হয়েছে , ! এখন মোহর মারার বিরুধীতা যদি নাস্তিকরা করে থাকে , তাহলে , অর্থ তো এই দারায় যে , তারা যা করে সেটা কে তারা সমর্থণ দেয় ।
আর আল্লাহ তায়ালা মোহর মারার মাদ্ধ্যমে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন
”কাফের রা বলে যে , এ কুরআন শুনিও না আর তাতে হট্টগোল করো বাধা দাও”
সুরা হামিম সজদাহ - ২৬ নং আয়াত
পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে তারা বাধা দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে । তাহলে এরা কি আসলেই সত্য জানার পুজারি ছিল ? যদি উত্তর হয় না , তাহলে , আল্লাহ তায়ালা তো ঠিকই বলেছেন , এরা মোহরপ্রাপ্ত । তারা নিজেদের কর্মের কারণে মোহরাংকিত ভাগ্য ক্রয় করেছে । তারা কক্ষনোও সত্য গ্রহণ করার চেষ্টা করত না ।
উক্ত আয়াতের তাফসিরে গেলে দেখতে পারবেন , তারা কি করতো , ! প্রকৃত অর্থে তাদের অনেকে কোরআনের প্রতি আকৃষ্ট ছিল , কিন্তু , তারা যখন বুঝতে পেরেছে যে কোরআন তাদের উপর একটি অনুভুতি সৃষ্টি করছে , তখন , তারা এটি থেকে সরে গিয়ে সুরা হামিম সজদাহ - ২৫ নং আয়াতের মত আদেশ দেন ।
আয়াতের তাফসিরে যা বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
ইবনে আব্বাস রা: বলেন , আবু জাহল সবাইকে বলত , মুহাম্মাদ সা: যখন কোরআন পরে তখন সবাই হই হোল্লর করতে থাকবে , যাতে সে কি বলে এটা যেন কেও না বুঝে । অনেকে শিষ দিয়ে , কেও তালি বাজিয়ে মানুষকে কোরআন থেকে বিরত রাখার প্রস্তুতি নিয়েছিল ।
তাফসিরে জালালাইন খন্ড - ৫ পৃষ্ঠা ৭৫৫
আপনারা কল্পনা করুন , এরকম যদি কেও করে , তাহলে , তারা কিভাবে সত্য অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে ? এদের মোহর মারা হবে এটাই তো স্বাভাবিক ।
এবার আসুন, ফিরে আসি আমাদের সেই বাকারা ৭ নং আয়াতে ।
উপরে তাফসিরে আনওয়ারুল কোরআন থেকে পরিষ্কার ভাবে আমি দেখিয়েছি , এটা কিছু সংখ্যাক , কাফেরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য , যারা কক্ষনোও ইসলাম গ্রহণ করেন নি । অনেকে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন , তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয় । পরিষ্কার কথা । এবং ভবিষ্যতেও হবে ।
তাফসিরে জালালাইনে , ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নাম্বার ৯১ এ আরও বিষয়টিকে পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে যে ,
এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে , বিষয়টি এমন নয় , যে আল্লাহ তায়ালা মোহর মেরে দেওয়ার কথা বলেছেন , আর সব কাফের রা , মোহরাংকিত হয়ে গেছে , তারা যাই করুক হেদায়েতের চেষ্টা করুক বা না করুক হেদায়েত পাবেনা , বিষয়টি এমন নয় ! বিষয়টি এমন যে , আল্লাহ তায়ালা জাতির উদ্দেশ্যে , একটি মেসেজ দিয়েছে , যার বাস্তবতা কেয়ামতের মাঠে দেখা যাবে ।
তাফসিরটির ৯২ নং পৃষ্ঠাতে আরও একধাপ এগিয়ে বুঝানো হয়েছে ,
আপনারা বুঝতেই পারলেন , এটি মূলত , তাদের কৃতকর্মের কারনেই , এই কথাটি বলা হয়েছে ।
এর অর্থ হল , তাদের কর্মের কারণে , তারা মোহর ক্রয় করে বসে ।
আরও পরিষ্কার হবে , যদি আপনারা দেখেন , সুরা মুতাফফিফিন ।
দেখুন কি বলা হয়েছে ,
এখানে আরও পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে , যে তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে ।
এবার আসুন একটা হাদিস দেখে আসি ,
উপরে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি , বান্দা যখন গোনাহের কাজ করে , এর ফলে তার অন্তরে দাগ পরে যায় । এবং সে এরপর থেকে শুধু গোনাহের দিকেই ধাবিত করা হয় । এভাবে আসতে আসতে গাঢ় হয়ে যায় বিষয়টি ।এই প্রভাব কেই আল্লাহ তায়ালা মরিচা সাব্যস্ত করেছেন ।
উপরিক্ত ব্যক্ষা গুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে , প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা এজন্য মোহর মারেন না যে তার শুধু ইচ্ছে হয়েছে , আর তাকে পথভ্রষ্ট করেন । এজন্য মোহর টা মারেন , কারন আল্লাহ তায়ালা জানেন , সে কক্ষনোও ঈমান আনবেনা ।
নাস্তিকরা সব সময় তাদের অভিযোগের আয়াত গুলি দেখাবে , কিন্তু যে সমস্ত আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে সেসমস্ত আয়াত দেখাবেনা , কারণ তারা চায় আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে যান ।
এবার আসুন , এর সিরিয়ালে , জবাব গুলো দেখে যাই ।
অন্যন্য তাফসির সমুহে দেখুন
* তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯১ থেকে ৯৫ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড , ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ১ খণ্ড, ৪১ ও ৪২ পৃষ্ঠা
* তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড , ৫৬ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ওসমানী ১ খণ্ড , ১৫ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৬ ও ৭ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ১৫৬ থেকে ১৬১ পৃষ্ঠা।
* তাফহীমূল কুরআন । সূরা বাকারা ২: ৬ থেকে ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
* তাফসীরে তাবারী শরীফ ১ খণ্ড , সূরা বাকারার ৬ ও ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
আল্লাহ জেনে শুনে মোহর মেরেছেন , সুরা জাসিয়ার ২৩ নং আয়াত এর জবাব
0 Comments